জীবনীঃবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পদত্যাগের চলমান একদফা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিল শিহাব। সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার সামনে পুলিশের গুলিতে থেমে যায় তার পথচলা। একই সাথে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় পরিবারের স্বপ্ন।
শহীদ মো. শিহাব আহমেদ ২০০৫ সালের ১৪ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা শফিউদ্দিন (৪৫), মালয়েশিয়া প্রবাসী। মা মোছাম্মৎ শাহনাজ খাতুন (৪৫), গৃহিণী।
শিহাব সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের বাণিজ্য বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং স্থানীয় একটি ব্লাড ব্যাংকের অন্যতম সদস্য ছিলেন।
শিহাব ছিলেন আদর্শবান, মানবিক গুণে গুণান্বিত ও দায়িত্বশীল। ক্রীড়ামোদী, স্নেহপরায়ণ, পরোপকারী ও দেশপ্রেমের মহান আদর্শে উজ্জীবিত এক সাহসী তরুণ। শুধু নিজের বা পরিবারের নয়, সমাজ ও দেশের জন্যও ভাবতেন, কাজ করতেন তিনি।
শহীদের মা বলেন, ‘আমার তিন ছেলে। শিহাব ছিল সবার বড়। ওর স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনীতে চাকরি করে দেশের জন্য কাজ করার। কিন্তু সব আশা শেষ হয়ে গেল। ওর বাবা মালয়েশিয়ায় থাকে। আমি ছেলেদের নিয়ে বাড়িতে থাকি। লেখাপড়ার জন্য ওর বাবা কত কষ্ট করছে! তার ইচ্ছা ছিল ছেলেদের মানুষ বানাবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না।
শিহাব শহীদ হলো, আর ওর বাবা শেষবারের মতো ছেলের মুখটাও দেখতে পেল না। সে দেশে ফিরে এলে আমি কী জবাব দেব?’
শহীদ শিহাব আহমেদের মা শাহনাজ পারভীন সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর উপজেলার মাধবপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে বাসস প্রতিবেদককে এসব কথা বলেন।
শিহাবের ছোট দুই ভাই যমজ: মো. হাসান ও মো. হোসাইন। একজন ইমপেরিয়াল প্রি-ক্যাডেট স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে, অপরজন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিহাবের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে এনায়েতপুরের মাধবপুর গ্রামে। ক্রিকেট ছিল তার প্রিয় খেলা। বিকেল হলেই ব্যাট-বল হাতে মাঠে ছুটে যেত। সহজ-সরল, মিষ্টভাষী এই কিশোরটি সবার সঙ্গে মিশে যেতে পারত। মানুষের প্রতি ছিল গভীর দায়িত্ববোধ। যে কারো জন্য রক্ত দিতে এগিয়ে আসত, যেকোনো প্রয়োজনে সাহায্যের হাত বাড়াত।
৪ আগস্টের ঘটনার বর্ণনায় শিহাবের মা বলেন, ‘ঘটনার কিছু আগে আমি ওকে ফোন করে জিজ্ঞেস করি, 'তুমি কোথায়?' সে জবাব দেয়, 'আমি হাসপাতালে আছি, একজনকে রক্ত দিতে এসেছি। পরে কথা বলব।'
দুপুর দেড়টার দিকে এনায়েতপুর থানার সামনে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। একটি গুলি শিহাবের ডান পাঁজরে লাগে। তখনই তাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য ভ্যানে তোলা হয়, কিন্তু ভ্যানে উঠাতেই সে মারা যায় বলে প্রতীয়মান হয়। তবুও বন্ধুরা দমে না গিয়ে শেষ চেষ্টা হিসেবে তাকে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু না, কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সর্বশেষ পরিবর্তন:
শহীদ শিহাব এর তথ্যে কোনো অসঙ্গতি পেয়েছেন? অথবা আরো তথ্য যুক্ত করতে চান?শহীদ শিহাব এর তথ্য দিন