যেভাবে শহীদ হয়েছেনঃপুলিশের বুলেট জানালা দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে।
জীবনীঃচব্বিশের জুলাই বিপ্লবে আন্দোলন করতে গিয়ে নির্মম নির্যাতনে নিহত হন মামাতো ভাই রাব্বি। ভাইয়ের হত্যার প্রতিবাদে মাঠে নামে মেহেরুন। শুধু ভাই হত্যার জন্যই নয়, সে দিন তার প্রতিবাদ হয়ে ওঠে দেশের আপামর জনগণেরই অভিব্যক্তি। ১৫ বছরের জমে থাকা ক্ষোভ, শোষণ-শাসন ও অনিয়মের বিরুদ্ধে মানুষের কণ্ঠগুলো যেন একযোগে প্রতিবাদী হয়ে উঠছে। এ দিকে আন্দোলন শেষ করে বাসায় ফেরেন মেহেরুন। কিন্তু তার সেই ফেরা স্থায়ী হয়নি। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী, বেপরোয়া র্যাব-পুলিশের গুলিতে রাজধানীর নতুনবাজারে ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় শহীদ হন মেহেরুন।
জুলাইয়ে ফ্যাসিস্টদের বর্বর হত্যাকাণ্ড দেখে অস্থির হয়ে উঠেছিলেন মেহেরুন। মামাতো ভাই রাব্বিকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে পুলিশের হত্যার ঘটনা, গণহত্যা, ছাত্রদের গ্রেপ্তার, ব্লক রেইড দিয়ে ছাত্রদের ধরে নিয়ে নির্যাতনসহ নানা অন্যায়ের প্রতিবাদে রাজপথে প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদ করেছেন মেহেরুন। জীবন বাজি রেখেই রাস্তায় নেমেছিলেন।
মেহেরুন নেছা তানহার বয়স ছিল ২২ বছর। বাসা ছিল মিরপুরে। পড়তেন মিরপুরের হযরত শাহ আলী মহিলা কলেজের অনার্স (সম্মান) তৃতীয় বর্ষে। বাবা মোশাররফ হোসেন গাড়ি চালক, মা আছমা আক্তার গৃহিণী। পড়ালেখার পাশাপাশি পার্টটাইম কাজ করতেন। নিজের খরচ নিজেই বহন করতেন। তাদের গ্রামের বাড়ি ছিল মানিকগঞ্জের হরিরামপুর।
শুরুর দিকে মেহেরুন রাজপথে আন্দোলনে তেমন সম্পৃক্ত ছিলেন না। ১৯ জুলাই জুমার নামাজ পড়ে মিরপুর মাজার রোডে আন্দোলনে যোগ দেয় মামাতো ভাই রাব্বি। সেই মিছিলে পুলিশের গুলিতে মারা যায় রাব্বি। তার লাশ মেডিকেল মর্গে আটকে রেখেও ঝামেলা করে পরিবারের সঙ্গে। তিনদিন পর লাশ ফেরত দেওয়া হয়। সেই ক্ষোভ থেকেই রাস্তায় বেরিয়ে আসেন মেহেরুন ও তার ছোট ভাই তারিফ। মামাতো ভাই হত্যার বিচার চেয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে আন্দোলনে যোগ দেন মেহেরুন। তার হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা থাকত, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না।’