যেভাবে শহীদ হয়েছেনঃগত ৪ আগস্ট মিরপুর-১০ নম্বরে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীদের ছোড়া দুটি গুলি শাকিলের মাথায় বিদ্ধ হয়।
জীবনীঃমো. জুলফিকার আহমেদ, ডাক নাম শাকিল। বয়স ২৩ বছর। ঢাকায় কোটা আন্দোলনে অংশ নেন। পুলিশের ছোড়া বুলেটে প্রথমে আহত হন এবং পরে শহীদ হন।
শাকিল ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ৩নং ওয়ার্ডের মৃত মো. ছিদ্দিক মৃধার বড় ছেলে। তিনি ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার ইউনিভার্সিটি অফ ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভে চারুকলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
একই সাথে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
গত ৪ আগস্ট ঢাকার মিরপুর-১০ নম্বরে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হলে সাথের বন্ধুরা তাকে প্রথমে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে তাকে আগারগাঁও নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনদিন তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে ৭ আগস্ট বিকেল ৩টার দিকে মারা যান শাকিল। পরের দিন ৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে ভেলুমিয়া গ্রামের বাগমারা রাঢ়ী বাড়ির দরজার জামে মসজিদের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
এ সময় বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
শহীদ জুলফিকার আহমেদ শাকিলের গ্রামের বাড়িতে গেলে তার মা বিবি আয়েশা জানান, কয়েক বছর আগে জুলফিকারের বাবা মারা যাওয়ার পর তাদের সংগ্রামী জীবন শুরু হয়। ছোটবেলা থেকে তিনি অন্যের বাসায় কাজ করে ছেলের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে গেছেন। ছেলে যখন বুঝতে শেখে, তখন টিউশনি করে নিজের পড়ার খরচ জোগাড় করার পাশাপাশি সেই আয় থেকে নিজেদের বাসাভাড়াও দিতো।
বাবাহারা ছেলেটা চেয়েছিলো নিজে কষ্ট করে বড় হয়ে পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে। সেটি আর হয়ে ওঠেনি। ঢাকায় উত্তাল আগস্টে ঘাতক বুলেটের আঘাতে তার জীবন প্রদীপ নিভে গেছে। তিনি যে সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন, সেটি পরিবারও জানতো না। মারা যাওয়ার পর জানতে পারে। তিনি যে ছাত্র ফেডারেশন করতেন, তার সাথের ছাত্ররাই তাকে বাড়িতে আনা ও দাফনের ব্যবস্থা করে।
বিবি আয়েশা আরো জানান, ঢাকায় অন্যের বাসায় কাজ করে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট ছেলে মো. সুমন ও বড় ছেলে শাকিলকে নিয়ে মিরপুর-১২ নম্বরের ডি-ব্লকে একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। ছোট ছেলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে আর এগোয়নি। তাই শাকিল তাকে একটি কারখানায় কাজে দিয়েছেন। নিজে কষ্ট করে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। গত মাসে আগের বাসাটি ছেড়ে দিয়েছেন। তাই এ মাসে নতুন বাসা দেখার কথা ছিলো।
গত ৪ আগস্ট দুপুরের দিকে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় মা বিবি আয়েশা বলেছিলেন, "বাবা, আন্দোলনে যাওয়ার দরকার নাই। বাইরে ঝামেলা চলছে।" তখন ছেলে বলেছিলো, "মা, আমার প্রতি তোমার আস্থা নাই? আমি বাসা দেখতে যাচ্ছি।" এরপর দুপুর দেড়টার দিকে তার সাথের বন্ধুরা খবর নিয়ে আসে যে শাকিল এক্সিডেন্ট করেছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরিবারের কেউ না গেলে তাকে ভর্তি করা হবে না। এ খবর শুনে মা বিবি আয়েশা হাসপাতালে যান। গিয়ে দেখেন তার ছেলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার মাথায় দুটি গুলি লেগেছে। একটি বের হয়ে গেলেও অপরটি ভেতরে রয়ে গেছে। এ অবস্থায় তার আর জ্ঞান ফেরেনি। ওইদিন বিকেল ৩টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শাকিল।