মাহফুজুর রহমান মুহিন

মাহফুজুর রহমান মুহিন

শিক্ষার্থী

আলহাজ্ব আব্বাস উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়

১৯ই জুলাই, ২০২৪

ডেটা যাচাই করা হয়েছে
বয়সঃ১৬
জন্ম তারিখঃতথ্য অনুপস্থিত
জন্মস্থানঃনিশানবাড়িয়া, মোড়লগঞ্জ, বাগেরহাট
যেভাবে শহীদ হয়েছেনঃপুলিশ কর্তৃক নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
জীবনীঃউচ্চশিক্ষা অর্জন করে সেনা কর্মকর্তা হয়ে দেশসেবায় আত্মনিয়োগ করার ইচ্ছা ছিল মেধাবী স্কুলছাত্র মাহফুজুর রহমানের। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পুলিশ বাহিনীর নৃশংস হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হবার আগে মায়ের কাছে এমন ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন তিনি। জমি নেই, ঘর নেই— এমন এক নিঃস্ব পরিবারের সন্তান শহীদ মাহফুজুর রহমান (১৬)। ঢাকার মিরপুর আলহাজ্ব আব্বাস উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির মানবিক বিভাগের অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। আন্দোলন-সংগ্রামে অকুতোভয়, সাহসী মাহফুজ বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের হরতকিতলা গ্রামের আব্দুল মান্নান হাওলাদার (৬০) ও বেগম (৫২)-এর একমাত্র পুত্র। মা-বাবার চার ছেলেমেয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। মাহফুজুর রহমানের বড় তিন বোন—শামীমা নাসরিন (৩১), শামীমা ইয়াসমিন (৩০) ও রহিমা বেগম সেতু (২৫)। তিনজনেরই এইচএসসি পাস করার পর বিয়ে হয়ে গেছে। মাহফুজুর রহমানের নানা মৃত আয়েজউদ্দিন ফরাজি (১০০) ছিলেন কৃষক এবং নানি মৃত জামিনা বেগম (৭০) ছিলেন একজন গৃহিণী। শহীদ মাহফুজুর রহমানের বাবা আব্দুল মান্নান জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী গুন্ডাবাহিনীর হুমকির মুখে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকায় আশ্রয় নেন। গত ১৬ বছর ধরে মিরপুর মদিনানগর আবাসিক এলাকার একটি বস্তিতে কেটেছে তাদের দিনরাত। এক বিস্ফোরক মামলায় আসামি হয়ে চার মাস কারাভোগের পর ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর মুক্তি পান তিনি। আব্দুল মান্নানের একমাত্র পুত্র মাহফুজুর রহমান ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই থেকে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে রাজপথে নামেন। মিছিলে-শ্লোগান তুলে ঢাকার রাজপথ কাঁপিয়েছেন। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে মিরপুর-১০-এ মিছিলে যোগ দেন মাহফুজ। সেই মিছিলেই কাছ থেকে গুলি চালায় পুলিশ। মাথায়, কোমরে ও পেটে তিনটি বুলেট বিদ্ধ হয় তার। এলাকাবাসী ও সহযোদ্ধারা জানান, ওই দিন দুপুরের দিকে হত্যা করা হয় তাকে। তার বাবা-মা ও আত্মীয়স্বজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খুঁজতে গেলে সেখানে লাশের স্তূপ ঘিরে রাখা ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা ওখানে কোনো লাশ নেই বলে তাদের ফিরিয়ে দেয়। এরপর তারা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ করেন। সেখান থেকেও তাড়িয়ে দেওয়া হয় তাদের। ২০ জুলাই সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে চারটি লাশের মধ্যে নিজের ছেলের লাশ শনাক্ত করেন মাহফুজের বাবা। আন্দোলন-সংগ্রাম না করার শর্তে লাশটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২১ জুলাই সকাল ১১টায় মিরপুর ১০ নম্বর আল হেলাল হাসপাতালের কাছে সেনাবাহিনীর অনুমতি নিয়ে কয়েক হাজার ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে মাহফুজের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তার প্রিয় বিদ্যালয় আব্বাস উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় গেটের সামনে ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। শহীদ মাহফুজুর রহমানের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স মিরপুর বেনারসি পল্লীর কাছে হামলা ও বাধার মুখে পড়ে, বাধ্য হয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে বাগেরহাটের পথে রওনা দেয়। পথেও বিভিন্ন স্থানে বাধা দেয়া হয়। ২১ জুলাই সকালে শহীদ মাহফুজের লাশ গ্রামের বাড়ি হরতকিতলায় পৌঁছায়। সকাল ১১টায় তৃতীয় নামাজে জানাজা শেষে বেলা ১২টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। ছেলের লাশ দাফনের পরও বাবা আব্দুল মান্নান নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকেন। ৫ আগস্ট পর্যন্ত তিনি পাথরঘাটায় আত্মগোপনে ছিলেন। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে ফ্যাসিস্ট হাসিনাসহ ৭৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সহকারী প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তামিম মামলার তদন্তের জন্য শহীদ মাহফুজুর রহমানের নিজ গ্রামে এসেছিলেন। এই পরিবারটির নিজস্ব কোনো জমি নেই, বসবাসের মতো কোনো জায়গা নেই। শহীদ মাহফুজুর রহমানের মা প্রতিবেশীর ঘরে রাত কাটান। চরম অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে পরিবারটি। অনুদান হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ার নগদ ২ লাখ টাকা এবং বাগেরহাট সদরের সাবেক এমপি এমএএইচ সেলিম এক লাখ টাকার চেক পরিবারের হাতে তুলে দেন।
সর্বশেষ পরিবর্তন:
মাহফুজুর রহমান মুহিন এর তথ্যে কোনো অসঙ্গতি পেয়েছেন?
অথবা আরো তথ্য যুক্ত করতে চান?মাহফুজুর রহমান মুহিন এর তথ্য দিন