যেভাবে শহীদ হয়েছেনঃবিজয় মিছিল শফিপুর আনসার একাডেমির দিকে অগ্রসর হতে থাকলে পুলিশ বাহিনী বিজয় মিছিলে গুলি চালায়। এ সময় একটি গুলি চোখের ভিতর দিয়ে ঢুকে পেছন দিয়ে বের হয়ে যায় এবং অন্যটি কপাল দিয়ে ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বের হয়। সাথে সাথেই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
জীবনীঃসেদিন ছিল ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। বিজয়ের মিছিল এগিয়ে যাচ্ছিল শফিপুর আনসার একাডেমির দিকে। রাজধানীজুড়ে তখন উৎসবমুখর জনতা, সবার চোখে বৈষম্যমুক্তির দুর্নিবার স্বপ্ন আর হৃদয়ে স্বৈরাচার পতনের অনিন্দ্য আনন্দ। এই উৎফুল্ল জনতার অংশ ছিলেন অন্তর। আগের দিন গায়ে গুলি লেগেছে।
অসুস্থ শরীর। তবু দমে যাননি তিনি। ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের বিজয়ের মিছিলে ছিলেন সামনের সারিতে।
শহীদ মো. অন্তর ইসলাম সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী হাট ইউনিয়নের কৈজুরী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ২০০২ সালের ২ জানুয়ারি। বাবা মো. আব্দুল হক (৬৫) ও মা মোছাম্মৎ জয়নব খাতুন (৬০)। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে অন্তর ছিলেন সবার ছোট। বড় ভাই আলাদা থাকেন এবং বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। অন্তর নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবার চালানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করতেন।
শাহজাদপুর সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। পরিবারের খরচ চালানোর জন্য অন্তর গাজীপুরের শফিপুরে অ্যাপেক্স কোম্পানিতে চাকরি করতেন। গাজীপুর থেকে পরীক্ষার সময় এসে পরীক্ষা দিয়ে আবার ফিরে যেতেন। পরিবারের খরচ ও নিজের পড়াশোনার খরচ তিনিই চালাতেন।
২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে আহত হন শহীদ অন্তর। ৫ আগস্ট, যখন জনগণের চূড়ান্ত বিজয় ঘটে, সেদিন অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও বিজয় মিছিলে অংশগ্রহণ করেন অন্তর ইসলাম।
প্রথমে তার লাশের কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা খুঁজে বের করে তাকে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সেইদিনই রাত ২টা ৩০ মিনিটে অন্তরের লাশ গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। পরের দিন ৬ আগস্ট সকাল ৯ টায় কৈজুরী মাদ্রসা মাঠে জানাজা নামাজ শেষে কৈজুরী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।