যেভাবে শহীদ হয়েছেনঃপুলিশ মিছিলে গুলিবর্ষণ করলে একটি গুলি সাদিকের পিঠ ভেদ করে নাভির পাশে আটকে যায়।
জীবনীঃস্বপ্ন ছিল বড় হয়ে মাওলানা হবে, মায়ের দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, তার পরিশ্রম লাঘব করবে, পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা আনবে, টিনের চালা পৈতৃক ঘরটা পাকা করবে। সে স্বপ্ন বুকে নিয়ে টাঙ্গাইলের প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদের তরুণ সাদিক পাড়ি জমিয়েছিল ঢাকা শহরে, কেবল পড়াশোনা করতে নয়, একজন আলোকিত মানুষ হয়ে ফিরে আসার প্রত্যয়ে।
কিন্তু স্বপ্ন পূরণের পথে বুকভরা আশা নিয়ে তার এই পথচলা থেমে গেল অকালেই, ঢাকা শহরে পা রাখার কয়েক বছরের মধ্যেই ইতি ঘটল তার যাবতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষা ও চাওয়া-পাওয়ার। জীবনের সমস্ত স্বপ্ন-সাধ, সম্ভাবনা আর মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর অপত্য বাসনা পেছনে ফেলে সে এখন শুধুই একটি স্মৃতি। ‘শহীদ’ নামের এক ভারী পরিচয়ে ঢাকা পড়েছে হাফেজ সাদিকের, সমস্ত অপূর্ণ স্বপ্ন, অপরিমেয় সম্ভাবনা আর লালিত বাসনা।
উচ্চশিক্ষা নিয়ে স্বপ্ন পূরণের আগেই মাত্র ২২ বছর বয়সে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উত্তাল সময়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়ে শহীদের তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাদ্রাসার ছাত্র হাফেজ সাদিক।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গণঅভ্যুত্থানের সেই উত্তাল সময়—১৯ জুলাই শুক্রবার, ২০২৪—ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যাপকভাবে রাজপথে পালিত হচ্ছিল। সেদিন জুমার নামাজ শেষে সহপাঠী বন্ধুদের সঙ্গে রাজপথে বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেন সাদিক। এ সময় পুলিশ মিছিলে গুলিবর্ষণ করলে একটি গুলি সাদিকের পিঠ ভেদ করে নাভির পাশে আটকে যায়।
পরিবারের লোকজন সেদিন অনেক খোঁজখবর নিয়েও তাকে পাননি। পরের দিন, ২০ জুলাই শনিবার, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি গুলিবিদ্ধ লাশের পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
লাশের শরীরে ইসলামী পোশাক ও চেহারা-সুরত দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আশপাশের মাদ্রাসাগুলোতে খবর দেয়। খবর পেয়ে আবদুল্লাহপুর উত্তরা জামিআ দীনিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার সুপার গিয়ে সাদিকের লাশ শনাক্ত করেন। পরে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল হাসপাতাল থেকে সাদিকের লাশ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ফুলবাড়িয়া করিমগঞ্জ ঘোনা পাড়া গোরস্থানে দাফন করা হয়।