মুজিবুর রহমান সরকার

মুজিবুর রহমান সরকার

প্রবাসী

২১লা জুলাই, ২০২৪

ডেটা যাচাই করা হয়েছে
বয়সঃ৫৭
জন্ম তারিখঃতথ্য অনুপস্থিত
জন্মস্থানঃগজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ
যেভাবে শহীদ হয়েছেনঃপুলিশের গুলিতে বুকে আঘাত করে।
জীবনীঃপরিবারের সচ্ছলতা আর সন্তানদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণে জীবনের বেশিরভাগ সময় বিদেশে কাটিয়েছেন ৫৭ বছর বয়সী প্রবাসফেরত মুজিবুর রহমান সরকার। প্রবাস থেকে ফেরার পর থেকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন মেয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য, যাতে গর্বিত বাবার চোখে মেয়ের সাফল্য দেখতে পারেন। কিন্তু ভাগ্য তার সহায় হয়নি। ২০২৪ সালের ২১ জুলাই ‘জুলাই বিপ্লব’-এর সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাদ্দাম মার্কেট বাসস্টপ সংলগ্ন তুষারধারা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে তাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার বড় মেয়ে মারওয়া রহমান সায়মা যখন কোভিড-১৯ মহামারীর সময় স্নাতক সম্পন করেন, তখন তিনি সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে আসেন। সেই থেকেই মুজিব অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন মেয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য, যাতে গর্বিত বাবার চোখে মেয়ের সাফল্য দেখতে পারেন। মুজিবুরের বড় মেয়ে সায়মা ইতোমধ্যে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। তার দ্বিতীয় মেয়ে মায়মুনা রহমান সাদিয়া একই কলেজে সম্মান তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। আর একমাত্র ছেলে মো. মাহিবুর রহমান সরকার স্থানীয় একটি স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ছে। সায়মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাসসকে বলেন, ‘আমাদের বাবা বলেছিলেন, তিনি আমাদের তিনজনের সমাবর্তনে উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু সেই স্বপ আর পূরণ হলো না।’ তিনি বলেন, ‘কলেজে যাওয়া-আসার পথে বাবা সবসময় আমাকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। ১৬ জুলাই আমি বাবাকে অনুরোধ করেছিলাম যেন তিনি আমার সঙ্গে না যান, কারণ নগরীর পরিস্থিতি তখন ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর দমন-পীড়নের কারণে চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল।’ সায়মা বলেন, ‘আমি বাবাকে রক্ষা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি। ২১ জুলাই পুলিশ আমাদের এলাকায় ঢুকে বাবাকে হত্যা করে।’ মুজিবুরের স্ত্রী নুরুন্নাহার পারভীন (৪৪) সেই ভয়াল দিনের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘সেদিনটা আর পাঁচটা দিনের মতোই শুরু হয়েছিল। আমরা সকলে একসঙ্গে দুপুরের খাবার খেলাম, তারপর মুজিবুর আসরের নামাজ পড়তে বের হলেন তুষারধারা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিপরীতে বাইতুশ শরফ জামে মসজিদে।’ তিনি বলেন, ‘আমি আর মেয়েরা তখন ঘুমিয়ে ছিলাম। ভেবেছিলাম, নামাজের আগে প্রতিদিনের মতো ছাদে গাছপালায় পানি দিতে গেছেন। কিন্তু পরে জানতে পারি, তিনি তুষারধারা জিরো পয়েন্টে গিয়ে ওই মসজিদে নামাজ পড়েছেন।’ প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পারভীন বলেন, নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ এলোমেলো গুলি চালাচ্ছিল। মসজিদের ভেতর থেকে বাইরের পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু না জানায়, বাইরে বের হতেই একটি গুলি তাঁর বুক ভেদ করে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। চারদিকে আতঙ্কের পরিবেশে কেউই সাহস করে তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেনি বলে জানালেন পারভীন। পুলিশ চলে যাওয়ার পর এক রিকশাভ্যান চালক সাহস করে তার নিথর দেহ বাড়িতে নিয়ে আসেন। পারভীন বলেন, ‘ভ্যান চালক যখন লাশ নিয়ে বাসার সামনে এল, তখন আমাদের ভবনের এক ভাড়াটিয়া চিৎকার করে বললেন, 'পারভীন, সব শেষ হয়ে গেছে।' ‘আমি তখনো বুঝতে পারিনি কী হয়েছে। কিন্তু নিচে নেমে যখন দেখি আমার স্বামী ভ্যানে শুয়ে আছেন, তখনও ভাবছিলাম, তিনি হয়তো বেঁচে আছেন, সামান্য আহত হয়েছেন। কারণ তাঁর চোখ খোলা ছিল, আর তিনি আমার দিকে তাকিয়েছিলেন।’
সর্বশেষ পরিবর্তন:
মুজিবুর রহমান সরকার এর তথ্যে কোনো অসঙ্গতি পেয়েছেন?
অথবা আরো তথ্য যুক্ত করতে চান?মুজিবুর রহমান সরকার এর তথ্য দিন