মো. মোজাক্কির মিয়া

মো. মোজাক্কির মিয়া

দিনমজুর

৫ই আগস্ট, ২০২৪

ডেটা যাচাই করা হয়েছে
বয়সঃ২৫
জন্ম তারিখঃতথ্য অনুপস্থিত
জন্মস্থানঃপাড়াগাও, বানিয়াচং, হবিগঞ্জ
যেভাবে শহীদ হয়েছেনঃপুলিশের গুলিতে নিহত।
জীবনীঃমাকে বলেছিলেন মোজাক্কির, ‘বেঁচে থাকলে দেখা হবে। আর মরে গেলে দোয়া কইরো’। মোজাক্কিরের মা খুশবানু বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর সাথে আলাপকালে কাঁদতে কাঁদতে এ কথা বলেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদ হন মোজাক্কির। তিনি হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার পাড়াগাও গ্রামের বাসিন্দা। খুশবানুর শরীর ভালো নেই। সন্তান হারিয়ে হয়ে পড়েছেন আরো দুর্বল। ছবির মাঝেই খুঁজে বেড়ান প্রিয় সন্তানকে। সন্তানের ছবি হাতে নিয়ে যখন তখন কেঁদে ওঠেন। এদিকে সন্তানকে হারিয়ে নাতিদের ভবিষ্যত নিয়েও মহা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। মো: মোজাক্কির মিয়া (৩৫) পেশায় দিনমজুর ছিলেন। দু’ভাই পাঁচ বোনের মধ্যে মোজাক্কির তৃতীয়। বাবা সমশের আলী প্রায় ১২ বছর আগে মারা যান। মা খুশবানু বেগম (৫০) একজন গৃহিণী। শহিদ মোজাক্কিরের দুটি ছেলে রয়েছে। প্রথম সন্তান মোজাহিদ মিয়া সাত বছর বয়সী। দ্বিতীয় সন্তান মোশারফ মিয়ার বয়স পাঁচ বছর। দু’ভাই লেখাপড়া করছেন স্থানীয় একটি মাদ্রাসায়। স্থানীয়রা জানান, গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে থানা মোড়ে আসেন হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। এ সময় ছাত্রদের সাথে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষ বাঁধলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সংঘর্ষের আশপাশের এলাকা। এ সময়ে পুলিশের গুলিতে শহিদ হন মোজাক্কির মিয়া। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে পরিবার প্রথমে খবর পায় যে তিনি আহত হয়েছেন। তবে পরে বানিয়াচং হাসপাতালে গিয়ে তার লাশ খুঁজে পান আত্মীয়-স্বজনরা। নিজ গ্রামের কবরস্থানে পরে তাকে দাফন করা হয়। শহিদ মোজাক্কিরের পরিবারকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ একাধিক সংস্থা আর্থিক অনুদান দিয়েছে। জেলা জামায়াতের পক্ষ থেকে ২ লাখ টাকা, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জিকে গউছের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ডা: সাখাওয়াত হাসান জীবনের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার ও হবিগঞ্জ পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান দেয়া হয়েছে। খুশবানু বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে মোজাক্কির শুরু থেকেই আন্দোলনে যেতো। আমি প্রায়ই তারে নিষেধ করতাম। কিন্তু সে কথা শুনতো না।’ তিনি আরো বলেন, শহিদ হওয়ার দিন সে সকালে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আন্দোলনে যায়। পরে দুপুরে শুনতে পাই সে আহত হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় তার লাশ পড়ে আছে। খুশবানু বলেন, শহিদ হওয়ার দিন সে আমাকে বলে, মা আমি আন্দোলনে যাচ্ছি। যদি বেঁচে থাকি তাহলে দেখা হবে আর মরে গেলে আমার সন্তানদের দেখে রেখ এবং আমার জন্য দোয়া করিও। এটিই ছিল আমার সন্তানের সাথে আমার শেষ কথা। তিনি আরো বলেন, আমার সন্তানকে এখন আমি খুঁজে বেড়াই। তার দুটি সন্তান রয়েছে। সন্তানরা বাবাকে হারিয়ে তাদের ভবিষ্যত জীবন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে। তিনি তার দু’নাতির ভবিষ্যত গড়তে সরকারের সহায়তা চেয়েছেন। মোজাক্কিরের স্ত্রী সুজেনা বেগম। বয়স ৩০ বছর। তিনি বলেন, আমার স্বামী মারা যাওযার পর দুটি সন্তানের লেখাপড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছি। সম্প্রতি তাদেরকে নিয়ে মাদ্রাসায় গিয়ে টাকার অভাবে ভর্তি করাতে পারিনি। তিনি বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের প্রতি তাদের সন্তান দুটির লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয়ার দাবি জানান। বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অবশ্যই স্বামী হত্যার বিচার চাই। প্রকৃত অপরাধীর সুষ্ঠু বিচার হলে স্বামীর দুঃখ কিছুটা ভুলতে পারবো। কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্ট করে সন্তানদের নিয়ে বেঁচে আছি। সকলের সহায়তা পেলে সংসার যুদ্ধে চলতে পারবো। না হয় জীবন চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।
সর্বশেষ পরিবর্তন:
মো. মোজাক্কির মিয়া এর তথ্যে কোনো অসঙ্গতি পেয়েছেন?
অথবা আরো তথ্য যুক্ত করতে চান?মো. মোজাক্কির মিয়া এর তথ্য দিন