জীবনীঃ১৯ জুলাই ২০২৪ জুম্মার নামাজের পর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায়, পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন একতা কলেজ বরিশালের এইচএসসি ২য় বর্ষের ছাত্র মারুফ হোসাইন।
মারুফের লাশ আনতে তার বাবা ইদ্রিস বক্স ১৯ তারিখ সন্ধায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। কিন্তু পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে লাশ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। অসংখ্য লাশের সাথে মারুফের লাশও মেঝেতে অবহেলায় পড়ে থাকে। মারুফের বাবা ছেলের লাশের বিষয়ে অকাট্য প্রমাণ দিলেও তারা লাশটি দেয়নি। পরের দিন আবারও তিনি কারফিউর মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছেলের লাশ আনতে যান। কিন্তু এদিনও পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে লাশ দেয়নি। বরং পুলিশের সাথে যুক্ত হয় আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের লোকজন। তারা মারুফ এবং তার বাবাকে সন্ত্রাসী, টোকাই উপাধি দেয়। মারুফের বাবাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে এবং নির্যাতনের হুমকি দেয়। বলা হয় ছেলে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেছে এই মর্মে স্বাক্ষর করে কাগজ দিলে তারা বিবেচনা করা দেখবে! ২য় দিনও তিনি ছেলের লাশ ছাড়াই ঘরে ফেরেন।
এদিকে বরিশালে মারুফের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। লাশ দাফনের জন্য খোঁড়া কবর এবং হাজারো মানুষ অপেক্ষায় থাকে।
৩য় দিন আবারও মারুফের বাবা ছেলের লাশের আনতে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে উপস্থিত হন। এদিন তার ছেলের লাশ বেওয়ারিশ এর তালিকায় ঢোকানোর চক্রান্ত শুরু হয়, অন্যদিকে অযত্নে ফেলে রাখা তিনদিনের পুরানো লাশে পচন ধরে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে — এসব দেখে মারুফের বাবার অনেক আকুতি এবং আর্তচিৎকারে হাসপাতাল ও পুলিশ কঠোরভাবে হুমকি দেয় যে লাশ দেয়া যেতে পারে এই শর্তে যে, 'তার ছেলের মৃত্যু হয়েছে রাস্তা পার হতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায়' এটা লিখে কাগজে স্বাক্ষর করতে হবে এবং কোনভাবেই লাশ গ্রামের বাড়িতে নেয়া যাবে না।
মারুফের অসহায় বাবা তাতেই রাজি হয়ে যান এবং সব প্রক্রিয়া শেষ করে ঢাকার পুর্ব বাড্ডা গোরস্তানে দাফন করেন তার প্রিয় সন্তানকে।
অবাক করার বিষয় হলো, যেই ছেলের মৃত্যুর কারণ হিসেবে ১৯ জুলাই, হাসপাতাল উল্লেখ করলো 'গানশট ইনজুরি', পরবর্তীতে তাকে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত বলে চালিয়ে দেয়া হলো? রাস্তা পার হতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায়? কি অবাক করা কথা! তাহলে সেই সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ কোথায়? রাস্তা পার হতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে তো জিডি হওয়ার কথা কোথায় সে জিডি?