যেভাবে শহীদ হয়েছেনঃপুলিশ কর্তৃক গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
জীবনীঃবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ঢাকার উত্তরায় নিহত শাকিল হোসেন আন্দোলন থেকে মোবাইল ফোনে তার বোনকে শেষ কথা বলেছিলেন, আপা উত্তরার পরিস্থিতি খারাপ। হয়তো যেকোনো সময় মারা যেতে পারি। চিন্তা করো না। আমরা যারা অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করছি সবার জন্য মাকে দোয়া করতে বলো।
মৃত্যুর আগে ম্যাসেজ করে জানিয়ে দেব। পরে আর ম্যাসেজ পাইনি, জানতেও পারিনি আমার ভাই কখন মারা গেছে। আজ আন্দোলন সফল হয়েছে। দেশ স্বাধীন হয়েছে।
কিন্তু আমার ভাই আন্দোলনের ফসল দেখে যেতে পারেননি।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) রাতে কালের কণ্ঠকে এসব কথা বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনে ঢাকার উত্তরায় নিহত টঙ্গী সরকারি কলেজের ছাত্র নিহত শাকিল হোসেনের বড় বোন বিউটি বেগম।
বিউটি বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, ভাইয়ের শেষ স্মৃতির কথা জানাতে গিয়ে বলেন, ভাই ফোনে শেষ কথা বলেছিল, আপা উত্তরার পরিস্থিতি খারাপ। হয়তো যেকোনো সময় মারা যেতে পারি।
চিন্তা করো না। আমরা যারা অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করছি সবার জন্য মাকে দোয়া করতে বলো। মৃত্যুর আগে ম্যাসেজ করে জানিয়ে দেব। পরে আর ম্যাসেজ পাইনি, জানতেও পারিনি আমার ভাই কখন মারা গেছে। কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ১৮ জুলাই বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বড় বোন বিউটি বেগমকে মুঠোফোনে এসব কথা বলে গেছেন ঢাকার উত্তরায় গুলিতে নিহত টঙ্গী সরকারি কলেজের বিএসএস (পাস) ও মানারত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ’র ছাত্র শাকিল হোসেন।
পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি দৈনিক ভোরের আওয়াজ পত্রিকার গাজীপুর মহানগরের গাছা থানা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
বিউটি বেগম বলেন, আমরা তিন বোন এক ভাই। ৯ বছর আগে স্ট্রোক করে শারীরিকভাবে অচল হয়ে পড়েন মা। সেই সঙ্গে তার কথা বলার শক্তিও হারিয়ে ফেলে। আমাদের তিন বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় শ্বশুর বাড়িতে থাকি। বাবা মাটির হাড়ি-পাতিলের ব্যবসা করে। বাবার সামান্য আয় ও শাকিলের টিউশনির টাকায় চলতো সংসার। শাকিলই মায়ের খাওয়া-দাওয়াসহ সকল কিছু খেয়াল রাখতো। কোনোদিন যদি টিউশনি শেষে শাকিল আসতে দেরি করতো, মা ততক্ষণ না খেয়েই থাকতো। এখন শাকিল নেই। মা জীবিত থেকে যেন লাশ হয়ে আছে। ছেলের শোকে কাঁদতে কাদঁতে প্রায় তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। শাকিলের পড়নের শার্টটি সব সময় তিনি বুকের কাছে আগলে রাখেন। এই শার্ট বুকে নিয়েই তার রাত কাটে, দিন কাটে। একমাত্র ছেলেকে হারানোর কষ্টের অশ্রুতে যেন চারপাশের পরিবেশও কাঁদছে।
নিহত শাকিলের বাবা বেলায়েত হোসেন কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে আমার ছেলের লাশ দাফন করি। আমার ছেলেকে পুলিশ গুলি করে মেরে ফেলেছে। গুলি তার বুকের ভেতর দিয়ে ঢুকে পেছন দিয়ে বড় সুরঙ্গ হয়ে বেরিয়ে গেছে। আমার ছেলের লাশের কোনো ময়না তদন্ত হয়নি। তবে উত্তরার একটি মেডিক্যাল থেকে মৃত্যু সনদ দিয়েছে।