জীবনীঃ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বেলা পৌনে তিনটার কথা। ভাত খেতে বসেছিলেন ইমন। বাবা বসে ছিলেন তাঁর পাশেই। দুই নলা ভাত মুখে দেওয়ার পরই মুঠোফোনে একটা কল আসে, এক গ্লাস পানি খেয়ে খাবার ফেলেই উঠে যান ইমন। ‘কই যাছ রে বাবা’—মায়ের এমন প্রশ্নে ইমনের জবাব ছিল, ‘খেলাত যাই।’ এভাবে খাবার ফেলে না উঠতে বাবা ধমক দেন তাঁকে। দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই তাঁর গুলিবিদ্ধ লাশ নরসিংদী সদর হাসপাতালে পড়ে থাকার খবর পায় পরিবার।
নরসিংদীতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে প্রথম যে দুজন নিহত হন, তাঁদের মধ্যে মো. ইমন মিয়া (২২) একজন। পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের দড়িচর এলাকার বর্গাচাষি কাইয়ুম মিয়া ও মর্জিনা বেগম দম্পতির ছেলে তিনি। নরসিংদী আইডিয়াল কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন ইমন।
১৮ জুলাই নরসিংদী শহরের ভেলানগর এলাকার জেলখানার মোড়ে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন ইমন মিয়া। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী বেলা তিনটা থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে স্লোগান দিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। সেদিন পুলিশ সদস্যরা কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ছুড়ছিলেন আর আন্দোলনকারীরা ছুড়ছিলেন ইটপাটকেল। সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্তত আড়াই শতাধিক আন্দোলনকারী দুই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তাঁদের মধ্যে নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ইমন মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মাহমুদুল কবির বাসার প্রথম আলোকে জানান, মৃত অবস্থায় অজ্ঞাত ওই তরুণকে (ইমন) নরসিংদী সদর হাসপাতালে আনা হয়। ছররা গুলিতে তাঁর বুক ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠাতে চেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু সঙ্গে থাকা শিক্ষার্থী ও তাঁর স্বজনেরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে চলে যান।