জীবনীঃমাদারীপুর সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র দীপ্ত দে। পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিংয়ে ভালো দক্ষ ছিলেন তিনি। জুলাইয়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকার একটি কাজও পেয়েছিলেন দীপ্ত। কিন্তু গত ১৮ জুলাই মোবাইল ফোনে টাকা রিচার্জের কথা বলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে পুলিশ-ছাত্রলীগ-আন্দোলনকারী ত্রিমুখী সংঘর্ষে ধাওয়া খেয়ে সাঁতার না জানা দীপ্ত পানিতে পড়ে লাশ হয়ে ফিরলেন। স্বপ্ন ছিল পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারের হাল ধরবেন, ছোট ভাইকে পড়াশোনা করিয়ে তার ভবিষ্যৎ গড়ে দেবেন। কিন্তু সব স্বপ্ন ভেঙে পরকালে পাড়ি জমিয়েছেন দীপ্ত।
গত ১৮ জুলাই সকালে খন্ড খন্ড- মিছিল নিয়ে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। আন্দোলনকারীদের দিকে টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। সে সময় পুলিশের গুলিতে অনেকেই আহত হয়। এ সময় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে শহরের শকুনি লেকের পানিতে দীপ্তসহ আরেক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী নিখোঁজ হন। পরে ফায়ার সার্ভিস কয়েক ঘণ্টা উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে দুপুরে দীপ্তর মরদেহ উদ্ধার করে।
ছেলেকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছেন দীপ্তর মা। চোখ বেয়ে মনের অজান্তেই গড়িয়ে পড়ছে পানি। ছেলের পুরনো স্মৃতি ও ছবি আঁকড়ে ধরে নিভৃতে শুধুই কাঁদছেন তিনি। দীপ্তর মা মনিকা দে বলেন, ‘আমার কলিজাকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন হয়ে গেল। এখনো মনে হয় আমাদের দীপ্ত বেঁচে আছে।’
দীপ্তর বাবা স্বপন দে বলেন, ‘আমার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। দীপ্তর বন্ধুরা জানিয়েছে, আমার ছেলে লেকে পড়ে যাওয়ার পরও ওপরে উঠতে চেয়েছে কিন্তু তাকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বাধা দিয়েছে।’
মাদারীপুরে ছাত্র আন্দোলনে প্রথম শহীদ হন দীপ্ত দে।